ছিনতাইয়ের পর মীমাংসাতে ভুক্তভোগীকে চাপ দিচ্ছে ছিনতাইকারীরা
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ মে ২০২৩, ১২:১০ এএম
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে ভোররাতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল সংলগ্ন চার রাস্তার মোড়ে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে নগরীর মতিহার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আরিফ হোসেন (২১)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ও শাহ্ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে অভিযোগে উল্লেখিত ছিনতাইকারীরা হলেন- রাব্বি (২৪) ও রুমি (২৫)। এছাড়াও অভিযোগে আরেকজন ছিনতাইকারীর নাম উল্লেখ না থাকলেও তার নাম রাজু বলে ভুক্তভোগী প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। অভিযুক্ত তিনজন ছিনতাইকারীর বাসা নগরীর নতুন বুধপাড়া এলাকায় বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গত শুক্রবার আনুমানিক ভোর ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকা হতে রাজশাহীতে আসা আমার এক বন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট থেকে রিসিভ করে মেডিকেল সেন্টার, সুইমিংপুল সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে শাহ্ মখদুম হলে আসার পথে একটা বাইকে অপরিচিত তিন ব্যক্তিকে দেখি। তাদের গতিবিধি আমাদের সন্দেহজনক মনে হলে আমরা দ্রুত হাঁটি। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখদুম হল, সুইমিংপুল, মেডিকেল সেন্টারসংলগ্ন চার রাস্তার মাথায় বাইকটি দাঁড় করিয়ে পথরোধ করে।
এসময় তারা আমাদের বিভিন্ন অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে ও এক পর্যায়ে বড় রেঞ্জ ও ছুরি প্রদর্শন করে। বিষয়টি দেখে সাহায্য চেয়ে আমি চিৎকার করতে থাকলে ছিনতাইকারীদের একজন আমার চোয়ালে ঘুসি মারে এবং আমার কাছে থাকা সব জিনিস বের করতে বলে।
তিনি বলেন, আমি দিতে রাজি না হলে তারা আমাকে ও আমার বন্ধুকে টেনেহিঁচড়ে জিমনেসিয়ামের রাস্তায় নিয়ে যেতে থাকে। এসময় আমার কাছে থাকা একটি স্বর্ণের চেইন ও টিউশন থেকে জমানো নগদ ১৫ হাজার টাকা, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা।
পুনরায় আমি চিৎকার করতে থাকলে তারা আমাকে আবারো আঘাত করে এবং ছুরি দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। এরপর আমার কাছে থাকা ফোন বের করে দিতে বলে। কিন্তু আমি কৌশলে আমার ও আমার বন্ধুর ফোনটি প্যান্টের পেছনের পকেটে রেখেছিলাম এবং সেগুলো আগেই ঘাসের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলাম, এতে তারা আমাদের ফোন নিতে পারেনি।
ঘটনার শেষদিকে আমার চিৎকার শুনে বিনোদপুরের দিক থেকে শাহ্ মখদুম হলের পেছন থেকে দুজন ছেলে দৌঁড়ে আসে। কিন্তু তখনও ছিনতাইকারীরা আমাকে মারতে থাকে। আর সেই দুই ছেলে দূর থেকে তা দেখে।
আরিফ বলেন, ছিনতাইকারীরা চলে যাওয়ার পর আমরা ফোনগুলো ঘাস থেকে তুলে হলের দিকে দৌঁড়ে আসি। তখন দূরে থাকা সেই দুই ছেলে আমাদের পেছনে পেছনে হলের গেটে এসে আমাকে তাদের মধ্যে একজন জানান যে তিনি ছিনতাইকারীর মধ্যে দুজনের নাম জানেন এবং একজনের সঙ্গে তিনি ফেসবুকে যুক্তও আছেন। এসময় তিনি তিনজনের মধ্যে দুজনের নাম রুমি ও রাব্বি এবং একজনের নাম জানেন না বলে জানায়। তিনি আরও জানান তিনজন ছিনতাইকারীর বাসা বুধপাড়ায়।
এসময় আমি প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে ছবি দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করি। এই দুই প্রত্যক্ষদর্শী হলেন ফয়সাল ইসলাম (১৯) এবং সুদীপ্ত কুমার সরকার (২১)। তাদের একজনের বাসা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচন্ডী এলাকায় আরেকজনের বাসা নাটোরে।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, আমি এই ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে থানায় অভিযোগ করতে বলেন।
পরে সেদিন সকালে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থানায় গিয়ে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দেই এবং অভিযোগ দায়ের করি। এরপর থেকে আমাকে ছিনতাইকারীদের পক্ষ থেকে মীমাংসার জন্য বলা হয়েছে এবং জিনিসপত্রগুলো নিতে তাদের এলাকায় একা যেতে বলা হয়েছে, কিন্তু আমি যাইনি। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই। আর আমি এ ঘটনায় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে কোনো মীমাংসা চাই না। আমি ছিনতাইকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই, যাতে কেউ পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এভাবে ছিনতাইয়ের সাহস না পায়।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসলে একজন মেয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরবর্তীতে এই প্রতিবেদককে সঙ্গে মেয়ে বান্ধবী থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী আরিফ। মেয়েটি তার বান্ধবী এবং তাকে রিসিভ করে হলের গেস্ট রুমে রাখতেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ছুটিতে আছেন তো, আমরা দেখছি বিষয়টা। স্যার আসুক, স্যার কালকে ছুটি থেকে আসবেন। ওই ছেলেটার তথ্যগুলো নিচ্ছি আমরা।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়টি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাকে জানিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে থানায় অভিযোগ করতে বলেছি।
প্রক্টর দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেছি। কিন্তু সে এখনো কোনো অভিযোগ জমা দেয়নি। আজকে তাকে আমি ডেকেছি। ঘটনার ভেতরে ঘটনা থাকে। সেখানে কি ঘটেছে আসলে এবং থানা কিভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে খোঁজ নেব।
